সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবে) বেড়িবাঁধ ভেঙে আনুলিয়া ইউনিয়নের ছয় গ্রামের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। খোলপেটুয়া নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে সহস্রাধিক চিংড়ি মাছের ঘের ও বোরো ধানের ক্ষেত। বেশ কিছু বসত বাড়িতে পানি উঠেছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকাল পৌনে ৯ টার দিকে পাউবো বিভাগ-২ এর আওতাধীন ৭/২ পোল্ডারের বিছট গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে আব্দুর রহিম সরদারের ঘেরের বাসার পাশ থেকে প্রায় দেড়’শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
নদীর পানিতে আংশিক প্লাবিত গ্রামগুলো হলো আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী চেঁচুয়া ও কাকবসিয়া। দ্রুত ভাঙন পয়েন্টে বিকল্প বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব না হলে রাতের মধ্যে আশেপাশের অরো বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়বে। এমনকি ভাঙন পয়েন্ট দিয়ে নদীর পানি ঢোকা দির্ঘায়িত হলে পুরো আনুলিয়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববর্তী খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নও প্লাবিত হতে পারে।
এদিকে সকালে ঈদের নামাজের পরপরই হঠাৎ করে বেড়িবাঁধ ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে গ্রামবাসীর ঈদের আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়। গ্রামের মসজিদের মাইকে সবাইকে বাঁধের কাছে আসার আহবান জানিয়ে গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙ্গন পয়েন্টে একটি বিকল্প রিংবাধ নির্মাণ শুরু করে। কিন্তু দুপুরে খোলপেটুয়া নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে গ্রামবাসী তাদের দেওয়া বিকল্প রিংবাঁধ টিকিয়ে রাখতে পারেনি। ভাঙন পয়েন্ট দিয়ে প্রবল বেগে জোয়ারের পানি ঢুকতে থাকে লোকালয়ে। সাথে সাথে তলিয়ে যেতে থাকে থাকে একের পর এক চিংড়ি ঘের। একই সাথে তলিয়ে যায় বল্লভপুর, আনুলিয়া ও চেচুয়া গ্রামের লাঘোয়া জমিতে লাগানো বোরো ধানের ক্ষেত। নদীর পানি ঢুকে পড়ে বিছট নিউ মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনেও। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে বাঁধের ভাঙনের বিস্তৃতি। ফলে হুমকির মুখে পড়ে ভাঙন পয়েন্টে থাকা বিদ্যুতের একটি খুটি। যে কোন মুহুর্ত্বে বিদ্যুতের ওই খুটি উপড়ে পড়তে পারে।
বিছট গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, সোমবার সকালে আমরা গ্রামবাসীরা সবাই পৃথকভাবে ঈদের নামাজ আদায় ব্যস্ত ছিলাম। নামাজ শেষে জানতে পারলাম আব্দুর রহিম সরদারের চিংড়ি ঘরের বাসার কাছ থেকে প্রায় দেড়শ ফুট এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধ হঠাৎ করে খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি গ্রামের তিনিটি মসজিদের মাইকে প্রচার দিয়ে দ্রুত লোকজনকে ভাঙ্গন পয়েন্টে যেতে বলা হয়। গ্রামবাসী স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে ভাঙ্গন পয়েন্টে একটি বিকল্প রিংবাধ নির্মাণের চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। দুপুরের জোয়ারের পানিতে সেই রিংবাঁধ ভেঙে খোলপেট্রয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা শুরু করে। এখন পর্যন্ত বিছট গ্রাম সহ ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। তিনি ভাঙন মেরামতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
বিছট গ্রামের ঘের মালিক রুহুল আমিন মোড়ল বলেন, বাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়, চেঁচুয়া ও নয়াখালী গ্রামের সব চিংড়ি মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকছে কাকবসিয়া গ্রামের চিংড়ি ঘেরগুলোতে। রাতের জোয়ারের সব ঘের তলিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এলাকার প্রায়ই ঘেরে প্রথম কিস্তির মাছ ধরা শুরু হয়েছিল। মৌসুমের শুরুতেই চিংড়ি ঘের তলিয়ে যাওয়ায় সব ঘের মালিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় শওকত হোসেন জানান, বাঁধ ভেঙে বিছট, বল্লভপুর, নয়াখালী, চেঁচুয়া ও আনুলিয়াসহ আশপাশের ৬টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। এসব গ্রামের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। মৎস্য খামার ভেসে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাঁধ বাধতে না পারলে পার্শ্ববর্তী খাজরা ও বড়দল ইউনিয়নও প্লাবিত হতে পারে।
স্থানীয় আনুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস বলেন, বিছট গ্রামে ভেড়িবাঁধ ভাঙনের খবর পেয়ে সাথে সাথে আমি ঘটনাস্থলে যাই। ভেড়িবাঁধের প্রায় দেড়শ ফুট এলাকা জুড়ে সম্পূর্ণ খোলপেটুয়া নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিষয়টি আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়। ছুটিতে থাকা পাউবো’র কর্মকর্তাদেরকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, ভাঙনের পরপরই গ্রামবাসীদের সাথে নিয়ে ভাঙন পয়েটে একটি বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু দুপুরের জোয়ারে সে বাঁধ টেকোনো সম্ভব হয়নি। নদীর পানিতে ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের আংশিক প্লাবিত হয়েছে। নদীতে একটু পরে ভাট শুরু হবে। ভাটা হলে ফের কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন জানান, বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের খবর পেয়ে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলামকে সেখানে পাঠানো হয়েছে। ভাঙন মেরামতে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।